কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত থাকা রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামে মুসলিমদের জন্য রোজা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে, কিছু কারণে আপনার রোজা বা রোজার সওয়াব নষ্টহয়ে যেতে পারে। তাই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানলে আপনি নিজের রোজা আরও সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে পারবেন।

জানবো শিখবো’র এই পর্বে আমরা আলোচনা করব কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে এমন কিছু রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে। আপনি যদি ইসলামিক নিয়ম মেনে রোজা রাখতে চান, তবে এই কারণগুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


খাবার বা পানীয় গ্রহণ:

রোজা ভঙ্গের প্রথম কারণ হলো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা। যদি কেউ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার বা পানি খায়, তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে। এই বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকো।" (সুরা আল-বাকারাহ ২:১৮৭)

ঔষধ বা ইনজেকশন গ্রহণ:

যদি কোনো ব্যক্তি রোজা অবস্থায় ইনজেকশন নেয় বা ঔষধ গ্রহণ করে, বিশেষ করে এমন কোনো ঔষধ যা শরীরের ভিতরে পুষ্টির প্রবাহিত হয়, তাহলে এটি রোজা ভেঙে দেয়।

ভ্রমণের কারণে রোজা ভঙ্গ:

যখন কেউ সফর বা ভ্রমণে থাকে এবং তার রোজা ভাঙ্গে, তখন ভ্রমণের কারণে রোজা রাখা না রাখার বিষয়ে ইসলাম উদারতা দেখিয়েছে। তবে কেউ যদি ভ্রমণের কারণে রোজা রাখতে না পারে, তবে পরবর্তীতে তা পরিশোধ করা যাবে। (সুরা আল-বাকারাহ দুই: একশ চুরাশি)

যৌন সম্পর্ক স্থাপন:

যৌন সম্পর্ক রোজা ভঙ্গের অন্যতম প্রধান কারণ। যখন কেউ রোজা অবস্থায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তখন তার রোজা ভেঙ্গে যাবে।, এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় সহবাস করবে, তাকে কাফফারা দিতে হবে।"(সহীহ বুখারি)

কাফফারা হল ইসলামিক আইনের একটি পরিভাষা যার অর্থ পাপের প্রায়শ্চিত্ত, যা অপরাধ বা পাপের ক্ষতিপূরণের জন্য বিশেষ অনুমোদনের জন্য উল্লেখ করা হয়।

রক্তদান:

রোজা রাখা অবস্থায় রক্তদান করা অনেক সময় রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি রক্ত নেয়া বা রক্ত গ্রহণ করা হয়, তবে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিছু ফিকাহবিদের মতে, যদি রক্তদানের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং রোজাদারের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে, তাহলে রোজা রাখতে সমস্যা হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যগত কারণে রক্তদান করার আগে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে রোজা রাখা সম্ভব এবং শরীরের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।

বমি করা:

যদি কেউ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে। তবে যদি কেউ অজান্তে বা অনিচ্ছায় বমি করে, সে ক্ষেত্রে রোজা ভঙ্গ নাও হতে পারে। (সহীহ মুসলিম)

মিথ্যা কথা বলা বা গীবত করা:

যদিও মিথ্যা কথা বলা বা গীবত করা সরাসরি রোজা ভঙ্গের কারণ নয়, তবে যদি কেউ মিথ্যা কথা বলে বা গীবত করে, তাহলে রোজার সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, "যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে, তার রোজা গ্রহণ করা হবে না।" (সহীহ বুখারি)

ধূমপান করা:

ইসলামী ফিকাহ অনুযায়ী, ধূমপানের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় বলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কারণ ধূমপানে তামাক বা সিগারেট থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা শরীরে প্রবাহিত হয়, যা খাওয়া বা পান করার মতোই একটি বিষয়। রোজা রাখার সময় কোনো কিছু যদি গলার মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়, তা রোজা ভঙ্গ করে।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: (নিদ্রা বা অসুস্থতা)

কোনো কারণে যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যান, তখন তার রোজা ভেঙে যাবে। তবে, যদি কেউ স্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে যান, তাহলে তার রোজা ভাঙবে না। শুধুমাত্র যদি অজ্ঞান হন তখনই এটি ঘটবে। (সহীহ মুসলিম)

আত্মহত্যার চেষ্টা করা:

আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বা আত্মহত্যার অভিপ্রায় থাকলে রোজা ভেঙে যাবে এবং এটি একটি গুরুতর অপরাধও। 

কোরআনে বলা হয়েছে, 

"আল্লাহ তাআলা বলেন, 

"নিজেকে হত্যা করো না, 

আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।" 

(সুরা আন-নিসা ৪:২৯)


আপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তবে, আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না।


আরো দেখুন:

Post a Comment

Previous Post Next Post