বিড়ালকে যারা সহ্য করতে পারেনা বা বিড়ালকে যারা আঘাত করে তাদের জানা প্রয়োজন...
ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল লালন-পালন করা জায়েজ। বিড়াল পালনে ঘরে ইঁদুরের উৎপাত কমে আসে। এছাড়া মাছের কাঁটা, খাবারের ঝুটা খেয়ে আমাদের পরিবেশকেও রাখে সুন্দর ও পরিষ্কার। ইসলামে বিড়াল পালনকে যতটা সমর্থন করা হয়েছে আর কোনো পোষা প্রাণীকে এতটা করা হয়নি। বিড়াল পালনকে উৎসাহ দিয়ে অনেক হাদিস ও মাসআলা রয়েছে।
বিড়ালের মাংস খাওয়া হারাম হওয়ার কারণে এর ঝুটাও হারাম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটা হাদিসের কারণে ইসলামি চিন্তাবিদরা এর ঝুটাকে হারাম থেকে নামিয়ে মাকরুহ সাব্যস্ত করেছেন।
হযরত কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, ‘আবু কাতাদা (রাঃ) আমার কাছে আগমন করলেন। আমি তার জন্য পানিভর্তি একটি অজুর পাত্র উপস্থিত করলাম। এসময় একটা বিড়াল তা থেকে পানি পান করল। তিনি ওই বিড়ালটির জন্য পাত্রটি কাত করে দিলেন। যাতে সে নির্বিঘ্নে পানি পান করতে পারেন। কাবশা (রাঃ) বলেন, তখন আবু কাতাদা (রাঃ) দেখলেন আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন, হে ভাতিজি! তুমি কি আশ্চর্য বোধ করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘এরা (বিড়াল) অপবিত্র নয়, এরা তোমাদের আশপাশে বিচরণকারী এবং বিচরণকারিনী।’ (নাসায়ি: ৩৪১)
বিড়াল |
মহানবী (সাঃ) এর কালজয়ী শিক্ষাদর্শন সাহাবির বিড়ালপ্রীতি
আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর প্রিয় সাহাবি আব্দুর রহমান (রাঃ) বিড়াল পালন পছন্দ করতেন। জামার আস্তিনের ভেতর পোষা বিড়াল নিয়ে ঘুরাফেরা করতেন। একদিন তিনি জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়াল ছানা নিয়ে রাসুল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। সেইসময় ছানাটি সহসা সবার সামনে বেরিয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে রাসুল (সাঃ) তাকে রসিকতা করে ‘ইয়া আবু হুরায়রা’ অর্থাৎ ‘হে বিড়ালের পিতা’ বলে সম্বোধন করলেন। তিনি সরল বোকা মানুষের মতো মুচকি হাসলেন। প্রিয় শিক্ষকের এই ডাকটা তার মনে ধরেছে খুব। সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের নামটাই বদলে ফেলবেন। আসল নাম আব্দুর রহমান ঢাকা পড়ে। হয়ে যান আবু হুরায়রা (বিড়ালের পিতা)। এরপর থেকে তিনি আবু হুরায়রা নামে খ্যাতি লাভ করেন। সহিহ হাদিসের সর্বোচ্চ পরিশুদ্ধ বর্ণনাকারী হিসেবে তিনিই আবু হুরায়রা নামে পরিচিত। রাসুল (সাঃ) ও তাকে এ নামেই ডাকতেন।
বিড়াল একটি পবিত্র প্রাণী
রাসুল (সা.) যখন অজু করতেন তখন নিজের অজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করাতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা দাউদ ইবনে সালেহ ইবনে দীনার আততাম্মার থেকে তার মাতার সূত্রে বর্ণিত, ‘তার (মায়ের) মুক্তিদানকারিনী মুনিব একদা তাকে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে হারিসাহ সহ প্রেরণ করেন। অতঃপর আমি তার কাছে পৌঁছে দেখতে পাই, তিনি নামাজ পড়ছেন। তিনি আমাকে (হারিসার পাত্রটি) রাখার জন্য ইশারা করলেন। ইত্যবসরে সেখানে একটি বিড়াল এসে তা থেকে কিছু খেয়ে ফেলল। আয়েশা (রাঃ) নামাজ শেষে বিড়ালটি যে স্থান থেকে খেয়েছিল সেখান থেকেই খেয়ে বললেন, নিশ্চয়ই রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশপাশেই ঘুরাফেরা করে। আমি রাসুল (সাঃ)-কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা অজু করতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ: ৭৬)
বাড়িতে বিড়াল পালনের বিধান
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, বিড়াল পালা বৈধ। তবে তাকে কোনো ধরনের কষ্ট দেয়া যাবে না। বিড়াল পুষতে চাইলে অবশ্যই তাকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে। বিড়ালের প্রতি যথাযথ দয়া-অনুগ্রহ দেখাতে হবে। মসজিদে হারাম কিংবা মসজিদে নববিতে প্রচুর বিড়াল ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। আগত মুসল্লিরাও তাদের পানি কিংবা খাবার দিয়ে থাকেন। রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘এক মহিলাকে বিড়ালের প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে আজাব দেয়া হয়। সে বিড়ালকে বন্দি করে রাখে। এ অবস্থায় বিড়ালটি মারা যায়। এমনকি বন্দি করে রেখে পানি দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি। যাতে করে বিড়ালটি জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।’ (মুসলিম: ৫৭৪৫)
পরিষ্কার পাত্রে খাবার ও পানি
বিড়াল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। সেজন্য মাটিতে বা বালুতে গর্ত করে সেখানে মল ত্যাগ করে ঢেকে দেয়। এছাড়া উন্মুক্ত মল থেকে গন্ধ ছড়ায় এবং তা তার শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে উপস্থিতি জানিয়ে দিতে পারে।
বিড়াল পালন করা কঠিন কিছু নয় বরং একটু যত্ন নিলে সে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। সে মূলত মাংসাশী প্রাণী। খাবারের পাশাপাশি বিড়ালকে পানি পান করানো খুবই জরুরি। আপনার ঘরবাড়ির আশপাশে কোনো একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি রেখে দিতে পারেন তাদের জন্য। বোবা প্রাণীগুলো মুখ ফুটে বলতে না পারলেও খাবার-পানি খুঁজে ঠিকই। মানুষের একটু ভালোবাসা পেলেই তারা কাছে আসতে চায়।
আপনার অপ্রয়োজনীয় খাবার ডাস্টবিনে না ফেলে বিড়ালকে খেতে দিন। পোষা পশু-পাখিসহ আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে মহান আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দয়া করেন। অগণিত সওয়াবে ঋদ্ধ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘দয়াবানদের ওপর দয়াময় আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো। তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)
বিড়ালের স্পর্শের বিধান
মক্কাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে বিড়ালের অবাধ অনুপ্রবেশ। এরা প্রত্যেক ইবাদতকারীর পাশেই ঘুমায়। গা ঘেঁষে বসে থাকে যত্রতত্র। মানুষের আদর-ভালোবাসায় লাই দিয়ে গড়া অদ্ভুত এই বিলাসপ্রবণ প্রাণী। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিড়ালের প্রস্রাব নাপাক। যদি কাপড়ে বা জায়নামাজে এক দেরহাম বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বিড়ালের প্রস্রাব লেগে যায়, তাহলে সেই জায়নামাজ বা কাপড়ে নামাজ আদায় করা নাজায়েজ। তবে যদি বিড়ালের প্রস্রাব না লাগে তাহলে শুধুমাত্র বিড়ালের বসার দ্বারা কোনো জায়নামাজ বা কাপড় নাপাক হয় না; কিন্তু বিড়ালের শরীরে ভেজা অপবিত্র কিছু লেগে থাকা নিশ্চিত হয়, তাহলে শরীর ও জায়নামাজ অপবিত্র হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/২০৪)
বিড়াল কেনা-বেচা
বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। বিড়াল এমন একটি প্রাণী- যার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না এবং একে খাঁচাবন্দি করাও নাজায়েজ। এজন্য বিড়াল ব্যবসায়ী পণ্য নয়। কারণ, বিড়াল মানুষের পাশেই ঘোরাঘুরি করে। রাসুল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ধমক দিয়েছেন। আবু জুবাইর (রহঃ) বলেন, ‘আমি জাবের (রাঃ)-এর কাছে কুকুর ও বিড়াল কেনা-বেচা করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ১৫৬৯)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘রাসুল (সাঃ) কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ: ৩৪৭৯)
ইসলামি স্কলারদের মধ্যে বিড়াল কেনা-বেচায় মতপার্থক্য থাকলেও অনেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেন। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ) বিড়াল কেনা-বেচাকে হারাম হিসেবেই সাব্যস্ত করেছেন (জাদুল মাআদ, ৫ম খণ্ড: ৬৮)