করোনাভাইরাস মহামারির পর হাত ধোয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও বেড়েছে। হাতের জীবাণু দূর করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও কিছু সময়ে এটি থেকে দূরে থাকা উচিত। চলুন তেমনই কয়েকটি অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিই।
অধিক পরিমাণে স্যানিটাইজার ব্যবহার নয়৷
জীবাণু ধ্বংসের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ভালো। তবে অধিক পরিমাণে এটি ব্যবহার করলে হাতের ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও এটি মেরে ফেলতে পারে। যা আমাদের সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। এই ভালো মাইক্রোবায়োমগুলোকে বাঁচাতে ঠিক কতটুকু হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত তা নির্ণয় করা অবশ্য কঠিন। তবে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করলে আপনি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার এড়াতে পারবেন।
সাবান ও পানি
আপনার পাশেই যদি সাবান ও পানি থাকে তাহলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাদ দিন। কারণ, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থার মতে, জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া। যেকোনো পরিস্থিতিতে হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবান ও পানি প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।
হাতে দৃশ্যমান ময়লা থাকলে
আপনার হাতে দৃশ্যমান ময়লা থাকলে তার ওপর যদি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন তাহলে সেটি আরও বেশি ময়লা ও কর্দমাক্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করবে না। কারণ অ্যালকোহলের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ময়লা দূর করতে পারে না এমনকি এই অবস্থায় সেটি খুব কম সংখ্যক জীবাণু মারতে পারে।
সুতরাং হাতের ময়লা দূর করতে অবশ্যই আপনাকে সাবান ও পানি দিয়েই হাত ধুতে হবে। যেমন খেলাধুলা, বাগানে কাজ করা বা এসব ধরনের কোনো কাজ করার পর হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত নয়।
আপনার সামনে কেউ হাঁচি দিলে
সত্যি করে বলুনতো কেউ আপনার সামনে হাঁচি দিলে কতবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছেন? হয়তো অনেক বার, ঠিক নয় কি? আপনার সামনে কেউ যদি হাঁচি-কাঁশি দেয় তাহলে ড্রপলেটের মাধ্যমে নিঃশ্বাসের সঙ্গে আপনি সেই জীবাণু গ্রহণ করতে পারেন। এখানে সংক্রমিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র হাত দায়ী নয়।
কোনো কিছু স্পর্শ না করলে
আপনি যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন তাহলে তা ভালোর পরিবর্তে বিপদ ডেকে আনবে। কারণ কোনো কিছু স্পর্শ না করলে বা পরিস্কার হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে অ্যালকোহল প্রতিরোধী জীবাণু তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে কোনো কাজ করবে না।
৫ মিনিট আগে স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছেন
মাত্র ৫ মিনিট আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছেন। আবারও তা ব্যবহার করার জন্য হাতে নিয়েছেন। তাহলে চরম ভুল করছেন আপনি। কারণ, ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে ত্বকে জ্বালাপড়া এবং হাত শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য বারবার ব্যবহার না করে একবার ভালো করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উত্তম। এজন্য পরিমাণমতো স্যানিটাইজার নিয়ে ২০ সেকেন্ড হাতের সব পাশে ভালো করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন, যতক্ষণ এটি না শুকায় ততক্ষন ঘষতে থাকুন।
বাচ্চাদের পাশে থাকলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাচ্চাদের উপর ব্যবহার করা নিরাপদ কারণ স্যানিটাইজারের ফলে শরীরে অ্যালকোহলের কোনো উল্লেখযোগ্য শোষণ হয় না। তবে অ্যালকোহলভিত্তিক স্যানিটাইজারের ইনজেশন বা শ্বাস গ্রহণের ফলে বিষক্রিয়া হতে পারে। ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, মার্কিন বিষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলি শিশুদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এক্সপোজার সম্পর্কে প্রায় ৮৫ হাজার কল পেয়েছিল। এ ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার কখনো সহজ জায়গাগুলোতে রাখা উচিত নয়।
ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে গেলে
ফ্লুতে আক্রান্ত হলে নিয়ম মেনে হাত পরিস্কার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। তবে এর মানে এই নয় যে আপনি বাইরে ঘোরাফেরা করতে পারবেন। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় তবে ফ্লুতে আক্রান্ত হলে আপনাকে বাড়িতেই থাকতে হবে।